dailyvideo

শেষের সেই প্রেরণা

ব্র্যাবোর্নে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি শারদ পাওয়ার ট্রফিটা তুলে দিলেন রিকি পন্টিংয়ের হাতে। পঞ্চমবারের চেষ্টায় অধরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়। সর্বজয়ী অস্ট্রেলীয়দের যেন তর সইছিল না। ডেমিয়েন মার্টিন একটু ধাক্কা দিয়েই মঞ্চের এক পাশে সরিয়ে দিলেন শারদ পাওয়ারকে, ‘সরে যান, সরে যান, এখন উৎসবের সময়!’ পন্টিং-মার্টিন-ওয়াটসনরা ট্রফি নিয়ে নাচলেন, গাইলেন। কিন্তু ভারতের সংবাদমাধ্যমজুড়ে থাকল নমস্য ভারতীয় রাজনীতিক শারদ পাওয়ারের অস্ট্রেলিয়া দলের হাতে হেনস্থা হওয়ার খবর। ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পেল অস্ট্রেলিয়াকে, সেই খবরটাই পেছনের পাতায়!
ভারতে ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কভার করার স্মৃতি হিসেবে ওই ঘটনাটাই মনে পড়ে যায় সবার আগে। আর মনে পড়ছে একটি ডোপিং কেলেঙ্কারির কথা। পরের দিন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। জয়পুরের সোয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে দুই দলই চলে এসেছে সকালের অনুশীলনে। বাতাসে খবর ছড়িয়ে পড়ল, পাকিস্তানের দুই ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ আসিফ পজিটিভ হয়েছেন ডোপ পরীক্ষায়। কিন্তু পাকিস্তান দলের সবার মুখেই কুলুপ। নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের বক্তব্য না পেলে এটি স্বীকার করতে চান না কেউ। না ম্যানেজার, না অধিনায়ক, না কোচ। সংবাদ সম্মেলনে এসে অতঃপর স্বীকার করলেন অধিনায়ক ইউনিস খান। এটি ছিল পিসিবির অভ্যন্তরীণ ডোপ পরীক্ষার ফল। শোয়েব-আসিফের নমুনা পাঠানো হয়েছিল কুয়ালালামপুরের পরীক্ষাগারে। ওই ম্যাচের প্রাক্কালে সেটিরই ফল জেনে যান মাজিদ ভাট্টি নামের এক পাকিস্তানি সাংবাদিক। ‘ব্রেকিং নিউজ’ দিয়ে ভাট্টি সেদিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে বনে গেলেন মহাতারকা। মাঠের খেলায় অবশ্য প্রধানতম দুই পেসারের অনুপস্থিতিকে থোড়াই কেয়ার করল পাকিস্তান। সহজেই হারিয়ে দিল ফেবারিট শ্রীলঙ্কাকে।
এই দুটি ঘটনায় অনেকটাই বর্ণিত আসলে টুর্নামেন্টের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট। কিন্তু যে ছোট ক্যানভাসে বাংলাদেশ ছিল মোহালি, জয়পুর, আহমেদাবাদ ও মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে, সেখানে কিছু সুখের স্মৃতিও আছে। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ১০ দলের শেষ চারটিকে নিয়ে প্রাথমিক পর্ব নামে টুর্নামেন্টের বাছাইপর্ব আয়োজিত হয় প্রথম। অবধারিতভাবেই ছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ উঠে যায় মূল পর্বে। হাত ধরাধরি করে বাদ পড়ে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই জয়পুরে জয় পায় বাংলাদেশ।
১০১ রানের বিশাল জয়টি ছিল শাহরিয়ার নাফীসের অপরাজিত ১২৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের মাধুর্যমণ্ডিত, সঙ্গে ছিল তিন বাঁহাতি স্পিনারের নৈপুণ্য। বাংলাদেশের ২৩১ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব আল হাসানের বাঁহাতি স্পিনে হাঁসফাঁস করে জিম্বাবুয়ে অলআউট ১৩০ রানে! ১০ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওটাই বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র জয় পরিসংখ্যানের পাতায়। ওই জয় দিয়েই তখনকার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ‘পরাশক্তি’ হয়ে ওঠার শুরু। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ওই ম্যাচেই হয়তো পায়ের ছাপ খুঁজে পায় টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির এক নম্বর অলরাউন্ডারকে। সাকিব আল হাসান যাঁর নাম। মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে যিনি মোহালিতেই চার দিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত ৬৭ রান। শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশ সেদিন হেরেছিল ‘মাত্র’ ৩৭ রানে। প্রতিপক্ষ দলে যদি থাকেন জয়াসুরিয়া, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, দিলশান, মুরালিধরন, মালিঙ্গাদের মতো নাম, পরাজয়ের এই ব্যবধানকে মাত্রই মনে হয়।
সত্যি বললে, ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মনস্তাত্ত্বিক অর্জনও ছিল অনেক। সবচেয়ে বড় বোধ হয় এটাই—সেরা আট দলের একটি হয়েই একদিন যেতে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এক পা এক পা করে এগিয়ে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নাম লেখানো সেটিরই তো প্রমাণ।

Posted by Momen on May 30, 2017. Filed under . You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0

0 comments for শেষের সেই প্রেরণা

Leave comment

Recent Entries

Recent Comments

Photo Gallery