dailyvideo

বুমেরাং হলো প্রস্তুতি ম্যাচ!

মাঝখানে মাত্র এক দিন। তারপরই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ। যেটিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। এটা কি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কোনো সময় হলো!
ভারতের প্রথম ম্যাচ আগামী ৪ জুন। তাদের তাই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এই ম্যাচের সূচি নিয়ে আপত্তি তুলল না! এখন এই প্রশ্ন তুললে নির্ঘাত সেটির অন্য অর্থ করা হবে। ও, প্রস্তুতি ম্যাচে ভরাডুবি হয়েছে বলে এখন এই কথা বলা হচ্ছে, তাই না!
ভরাডুবিই তো! ৮৪ রানে অলআউট হয়ে ২৪০ রানের হার! ৫০ ওভারের ম্যাচ এর চেয়ে একতরফা হওয়া কঠিন। একসময় তো এর চেয়েও খারাপ কিছুর আশঙ্কা জেগেছিল। ৭.৩ ওভার পর স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ২২! সেই ৬ উইকেটও কিনা মাত্র ২৫ বলে! মেহেদী হাসান মিরাজ আর মুশফিকুর রহিম উইকেট পতনে একটু বাঁধ দিলেন। ২৫ রানের জুটি এমনিতে কিছুই নয়। অথচ সেটিকেই কাল কত বড়ই না মনে হলো! পরের জুটিতে মিরাজ আর সানজামুল তুললেন ৩০ রান। বাংলাদেশের ইনিংসে দুই অঙ্কের রান শুধু এই তিনজনেরই।
প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত করেছে ৭ উইকেটে ৩২৪। সেটিও কারা করলেন! বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং ব্যাটিংই করেননি। ওয়ানডেতে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র কীর্তি যাঁর, সেই রোহিত শর্মা রুবেলের প্রথম বলেই প্লেড অন হওয়ার আগে করতে পেরেছেন মাত্র ১ রান। অজিঙ্কা রাহানেও যখন মোস্তাফিজের বলে প্রায় একইভাবে আউট হলেন, ভারতের স্কোর ২ উইকেটে ২১। তারপরও রানটা এমন ফুলেফেঁপে উঠল কীভাবে!
বিখ্যাত ত্রয়ী ব্যাটিং না করায় পাওয়া সুযোগটা যে দুর্দান্তভাবে কাজে লাগালেন দীনেশ কার্তিক! ৭৭ বলে ৯৪ রান। সেঞ্চুরিটা না করে কেন ওই সময় রিটায়ার করলেন, তা একটা রহস্য বটে। রান বেশি করেছেন বলে কার্তিকের নামটা আগে বলা হলো। নইলে একসময় তিন শ ছোঁয়া নিয়ে সংশয় ঝেঁটিয়ে দূর করে ভারতকে আরও অনেকটা দূর নিয়ে গেলেন তো আসলে হার্দিক পান্ডিয়া। ৫৪ বলে ৮০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে নিজের দাবিটাও জানিয়ে রাখলেন এই অলরাউন্ডার। শেষ ১০ ওভারে ৯৭ রান তুলেছে ভারত। এর ৬৩-ই পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের বোলিংয়ে ভালোও ছিল, মন্দও ছিল। তাসকিন নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন। বাঁহাতি স্পিনার সানজামুলও ভালোই মার খেয়েছেন। আবার রুবেল দারুণ বোলিং করেছেন। তরুণ মিরাজও তা-ই। মোস্তাফিজের প্রথম স্পেলটাও ভালো ছিল।
প্রস্তুতি ম্যাচের সুবিধা হলো, নিজেদের মতো করে সেটির ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ভালো করলে এ থেকে পাওয়া মনস্তাত্ত্বিক সুবিধার জয়গান গাওয়া হয়। খারাপ করলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে দেওয়া যায়, এটা তো নিছকই প্রস্তুতি ম্যাচ। ৮৪ রানে অলআউট হওয়ার পর খুব নিস্পৃহভাবে তা বলা কঠিন। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এসে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের তাই মেনে না নিয়ে উপায় থাকল না যে ব্যাটিংটা বড় হতাশাজনক হয়েছে। তবে ‘এটা প্রস্তুতি ম্যাচ, এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই’—এই সুরটা আগাগোড়া বজায় রাখলেন। যেমন ব্যাটিংয়ে যা হয়েছে, তা নিছকই দুর্ঘটনা। মাঝেমধ্যে এমন হয়ে যায়। সঙ্গে এক দিন পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসল খেলায় আর এমন হবে না বলে আশাবাদ।
রুবেল-মিরাজের বোলিং যদি ইতিবাচক দিক হয়, নেতিবাচক দিক ব্যাটিং, ব্যাটিং এবং ব্যাটিং। সঙ্গে ক্যাচ ফেলার কথাটাও আসতে পারে। বদভ্যাসটা এদিনও বজায় থাকল। আগের দুটি ম্যাচে নয়টি ক্যাচ পড়েছে। এদিন অবশ্য মাত্র দুটি। একটিতে আসামি মোসাদ্দেক, অন্যটিতে মুশফিক। দুটি ব্যর্থতার জন্যই বড় মূল্য দিতে হয়েছে। কারণ প্রথমবার ব্যাটসম্যান ছিলেন কার্তিক, দ্বিতীয়বার পান্ডিয়া।
তারপরও ৩২৪ নিয়ে এত ভাবিত হওয়ার কিছু ছিল না। প্রস্তুতি ম্যাচ তো প্রস্তুতির জন্যই। সেটিতে নানা হিসাব থাকে। সাকিব আল হাসান যেমন ২৭তম ওভারে আক্রমণে এসে মাত্র ৩ ওভার বোলিং করলেন। যদিও সেই ৩ ওভারেই দিয়েছেন ২৩ রান।
ও হ্যাঁ, সাকিবই ছিলেন এই ম্যাচের অধিনায়ক। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্রাম নিয়েছেন। তামিম ইকবালও তা-ই। ম্যাচের আগে যে খেলোয়াড় তালিকা দেওয়া হলো, তাতে প্রতি দলে ১২ জন করে খেলোয়াড়। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের প্রস্তুতি ম্যাচটিতে ১৩ জন করে খেলেছে। এটিও ১২ জনের না ১৩ জনের ম্যাচ, তা নিয়ে অবশ্য বিভ্রান্তি থেকেই গেল। ১২ জনের বাইরে থেকেও যে বোলিং করলেন উমেশ যাদব!
ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে মিলে নতুন বলে ধ্বংসযজ্ঞটাও তিনিই চালালেন। বাংলাদেশের প্রথম ৬ উইকেট সমান ভাগ করে নিয়েছেন এই দুই পেসার। কাল সকাল থেকেই লন্ডনের আকাশ মেঘলা, সূর্য অনেকক্ষণ পরপর একটু উঁকি দিয়েই মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে। পেস বোলিংয়ের জন্য আদর্শ এক পরিবেশ। তবে বল যে খুব বেশি কিছু করেছে, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশের ইনিংস হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় হাথুরুসিংহে শুধু ভালো বোলিংকে কারণ হিসেবে দেখাতে চাইলেন। যদিও বাজে ব্যাটিংয়ের বেশি না হলেও অন্তত সমান ভূমিকা তাতে। ইমরুল ও সাকিব যেমন বাউন্সার চালাতে গিয়ে আউট হলেন। সাব্বির জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে। দু-একজন অবশ্য ভালো বলেরও শিকার। যেমন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের ইনিংসে তৃতীয় শূন্য! মোসাদ্দেকের আগে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরেরও বিদায় শূন্য রানেই। এই মাঠে জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ওভালে কেউ শূন্য রানে আউট হলেই তাই সেটি মনে পড়ে যায়। তবে এভাবে ব্র্যাডম্যানের পাশে কেউ বসতে চায় নাকি!
বাংলাদেশও যেমন চায়নি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে নামার মাত্র দুদিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচটা এমন আত্মবিশ্বাস বিনাশী রূপ নিয়ে বুমেরাং হয়ে যাক!

Posted by Momen on May 30, 2017. Filed under . You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0

0 comments for বুমেরাং হলো প্রস্তুতি ম্যাচ!

Leave comment

Recent Entries

Recent Comments

Photo Gallery