dailyvideo

রোজা না রাখতে পারলে করণীয়

রমজান মাসে যারা অসুস্থ বা পীড়িত, অতিশয় বৃদ্ধ, যাদের দৈহিক ভীষণ দুর্বলতার কারণে রোজা পালন করা খুবই কষ্টদায়ক হয় এবং যারা ভ্রমণে থাকার কারণে সিয়াম পালন করতে পারে না, তাদের জন্য রোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদ্ইয়া ইত্যাদি ব্যবস্থা স্থির করে ইসলামি শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা (সিয়াম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ‘ফিদ্ইয়া’ অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। ‘যদি তোমরা উপলব্ধি করতে তবে বুঝতে সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে;
১. মুসাফির অবস্থায়।
২. রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে।
৩. মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
৪. এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে।
৫. শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে।
৬. কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
৭. মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়।
যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয় (অর্থাৎ একটির পরিবর্তে একটি):
১. স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে।
৩. পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে।
৪. ডুশ গ্রহণ করলে।
৫. নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পৌঁছে)।
৬. মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর যদি তা মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছে।
৭. যোনিপথ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সহবাস করার ফলে বীর্য নির্গত হলে।
৮. স্ত্রী লোকের যোনিপথে ওষুধ দিলে।
উল্লেখ্য, রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়ে রোজা ভঙ্গের কোনো কাফফারা নেই, শুধু কাজা আছে।
যেসব কারণে কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয় (অর্থাৎ একটির পরিবর্তে ১+৬০= ৬১টি রোজা রাখতে হবে):
১. রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।
২. রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করলে।
কাফফারা আদায়ের উপায়-
কাফফারা তিন উপায়ে আদায় করা যায়। প্রথমত, একটি গোলাম আজাদ করা বা দাসমুক্ত করা; দ্বিতীয়ত, বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোজা পালন করা।
কাফফারার রোজার মাঝে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তৃতীয় হলো ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে আহার করানো বা আপ্যায়ন করা।
রোজার ফিদ্ইয়া:
কারও পক্ষে রোজা রাখা দুঃসাধ্য হলে একটা রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে অন্নদান করা কর্তব্য। শরিয়ত মোতাবেক রোজা পালনে অক্ষম বা সামর্থ্যহীন হলে প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে ‘সাদাকাতুল ফিতর’-এর সমপরিমাণ গম বা তার মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদ্ইয়া’ তথা বিনিময় বা মুক্তিপণ। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুতর রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, যার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই অথবা রোজা রাখলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, তারা রোজার বদলে ফিদ্ইয়া আদায় করবে। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি যদি সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো শক্তি ও সাহস পায়, তাহলে তার আগের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তখন আগে আদায়কৃত ফিদ্ইয়া সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।
অসুস্থ ব্যক্তি ফিদ্ইয়া বা মুক্তিপণ আদায় না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদ্ইয়া আদায় করা কর্তব্য; যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে যায়। অন্যথায় আদায় করা মুস্তাহাব।
উল্লেখ্য, প্রতিটি রোজার ফিদ্ইয়া হলো একটি সাদাকাতুল ফিতর দরিদ্র এতিম বা মিসকিনকে দান করা অথবা একজন ফকির বা গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো। অনেক জায়গায় দেখা যায় গরিব লোক কোনো ধনীর বদলি রোজা পালন করে দিচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই একজনের রোজা অন্যজন বদলি হিসেবে পালন করতে পারবে না।
কেউ কারও রোজা বদলি হিসেবে রাখলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা শুদ্ধ হবে না।
রোজার ফিদ্ইয়া গুনাহমাফির মাধ্যমে মানুষকে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। বিনা কারণে যে ব্যক্তি একটি রোজা না রাখে এবং পরে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে, তবু সে ততটুকু সওয়াব পাবে না, যতটুকু মাহে রমজানে ওই একটি রোজা পালনের কারণে পেত। এ সম্পর্কে ফিকহবিদদের মতে, দুই মাস একাধারে রোজা রাখলে স্বেচ্ছায় ভাঙা একটি রোজার কাফফারা আদায় হয়। এ কাফফারার বিনিময়ে একটি রোজার ফরজের দায়িত্বটাই কেবল আদায় হয়।
আর যারা নানা অজুহাতে ও স্বেচ্ছায় পুরো মাহে রমজানের রোজা রাখে না, তাদের শাস্তি কত যে কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারীদের ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের এক দিনে রোজা কোনো ওজর বা অসুস্থতা ব্যতীত ভঙ্গ করবে, সারা জীবনের রোজাও এর ক্ষতিপূরণ হবে না, যদি সে সারা জীবনও রোজা রাখে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ)
ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে যে কঠিন শাস্তির হুকুম এসেছে, সেই ব্যক্তি ইহকালে তা না পেলেও পরকালে জাহান্নামের দাউ দাউ অগ্নিকুণ্ডে তার শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ; তাই রমজান মাসে রোজার সংখ্যা পূরণ করাই অধিকতর শ্রেয় ও কল্যাণকর।

Posted by Momen on May 30, 2017. Filed under . You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0

0 comments for রোজা না রাখতে পারলে করণীয়

Leave comment

Recent Entries

Recent Comments

Photo Gallery